প্রবাসীদের কষ্টের sms ও জীবনের গল্প

প্রবাসীদের কষ্টের sms ও জীবনের গল্প

প্রবাস জীবন কতটা কষ্টের সেটা প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেনা। একমাত্র প্রবাসী ভাইদের নিজের আপনজনদের ছেড়ে দূর দেশে পাড়ি দিতে হয় শুধুমাত্র তাদের ভালো রাখতে। তারা এতটাই নিজের প্রতি স্বার্থপর যে কখনো নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে না। প্রবাসী ভাইয়েরা সর্বদাই তার কাছের মানুষের ভালোর কথা চিন্তা করে। কাছের মানুষদের ভালোর কথা চিন্তা করে তারা তাদের জীবন ও যৌবন দুটোই বিসর্জন দিয়ে থাকে। তাদের করা কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে তার পরিবার সুখে শান্তিতে বসবাস করে। অথচ সে কেমন আছে তার খোঁজখবর তেমন নেয় না।

এত কষ্ট করার পর প্রবাসী ভাইদের কোন আক্ষেপ থাকে না। তারা সব দুঃখ কষ্ট ভুলে পিতা মাতা ভাই বোন স্ত্রী-সন্তান যাহা চায় তাই দেয়। এদিকে ভাই প্রবাসে এসে কামলা দেয় আর অন্যদিকে তার ছোট ভাই বোন দেশে থেকে আইফোন কেনার আবদার জানায়। তবুও প্রবাসী ভাই তার ছোট ভাই বোনের আবদার মিটিয়ে থাকে কোন প্রকার অভিযোগ ছাড়া। প্রকৃতপক্ষে প্রবাসী ভাইদের মন অন্যরকম হয়ে থাকে। তাদের মন উদারতায় পরিপূর্ণ থাকে।

প্রবাসী কষ্টের sms

আজকের এই পোস্টে আমি প্রবাসী ভাইদের কিছু কষ্টের এসএমএস তুলে ধরেছি। যদিওবা শুধুমাত্র লেখালেখির মাধ্যমে আমি তাদের কষ্টটা এতটা মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারবনা তবুও চেষ্টা করব। প্রবাসী ভাইদের উপর শ্রদ্ধা রেখে আমি আজকের এই পোস্টের লেখা শুরু করলাম। আশা করি প্রবাসী ভাইদের অনেক ভালো লাগবে।

>  স্বপ্ন ছিল বাধবো ঘর.. প্রবাস আমায় করলো পর.. জন্ম নিলাম বাংলাদেশে.. ঘুমাইতে হয় প্রবাসে।

> আমরা প্রবাসীরা কখনো নিজের সুখে সুখি হইনা। আমরা সুখী হই পরিবারের সুখে। কিন্তু সেই পরিবার যখন আমাদের কষ্টের মূল্য দিতে জানে না। তখন এর চেয়ে কষ্টের কিছু হতে পারে না।

> আমরা প্রবাসীরা নিজেদের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের লোকজনের স্বপ্ন পূরণ করে থাকি। কিন্তু দেশে এসে আমাদেরকে আরো নানান জিনিসের খোটা শুনতে হয়। যেটা মনকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে।

> আমরা প্রবাসীরা তখনই খুশি হই যখন জানতে পারি আমাদের পরিবার সুখে আছে । তখন মনে হয় আমাদের প্রবাস জীবন সার্থক হয়েছে।

> প্রবাস জীবন হলো নিজের সমস্ত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটানো। প্রবাস মানে নিজের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কিছু টাকার জন্য সবকিছু বিসর্জন দেয়া।

> দিনরাত পরিশ্রম করে কাজে কাজে জীবন শেষ। বাড়ির মানুষ মনে করে আছি কত সুখে। কি যে ব্যাথা জমে আছে আমার এই বুকে।

> আপনজনরা খবর নেয় মোবাইল ফোনে.. মুখে থাকে হাসি… কান্না থাকে মনে।

> প্রবাসে আমি কাজ করে জীবন করি পার.. প্রবাসের কাছে পেলাম শুধু দুঃখ উপহার..ভেবেছিলাম প্রবাস মানে সুখ বাগানের ফুল..প্রবাসেতে আইসা দেখি আমার ভাবনা ভুল..! দেশের ছেলে দেশে ছিলাম ঐইটাই ছিলো ভালো প্রবাসে এসে কাদঁতে কাদঁতে চোঁখ করলাম কালো।

প্রবাসীদের কষ্টের এসএমএস

> আমার উপস্থিতি হয় যদি তোমার কষ্টের কারণ, কথা দিলাম হবে না আর তোমার সীমানায় আমার আগমন, সাজিয়ে নিও নিজের মতো তোমার ভুবন।

> বছরের পর বছর প্রবাস জীবনে কষ্ট করে একটু সুখের জন্য যখন বাড়ি যাই তখন শুনতে হয় এত তাড়াতাড়ি তুই কেন চলে আসলি। আর একটা বছর থেকে আসলেই তো পারতি। কিভাবে তাদের বোঝাবো একনজর তাদেরকে দেখার জন্য সেই দূর প্রবাস থেকে চলে এসেছি।

> জীবন যুদ্ধে সারা জীবন যুদ্ধ করে যাওয়া হল প্রবাস জীবন। এই প্রবাস জীবনে থাকা অবস্থায় জীবনের অনেক ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করে। জীবন উপভোগ করার থেকে কষ্টের পরিমাণটা বেড়ে যায়।

> নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে প্রবাসে এসেছি। এর থেকে কষ্টের আর কোন কিছু হতে পারে না।

> তুমি যখন একটা জায়গা ত্যাগ কর তখনকার অনুভূতিটা অনেকটাই অদ্ভুত। তুমি হয়তো সেখানকার মানুষকে মনে করবেনা, তবে তুমি নিজেকেই সেখানে মিস করবে।
— আজার নাফিসি

> যখন তুমি অন্য দেশে যাও একটা কথা অবশ্যই মনে রেখো – অন্য একটা দেশ তোমার জন্য আরামপ্রদ করে তৈরি করা হয়না, সেটি তৈরি করা হয় সেখানের মানুষের জন্য আরামপ্রদ করে।
— ক্লিফটন ফেডিম্যান

প্রবাসী জীবনের গল্প

আজকের এই পোস্টে আমি এক প্রবাসী ভাইয়ের জীবনের গল্প তুলে ধরব। কাহিনীটা বাস্তব। এবং আমার নিজের দেখা। এই প্রবাসী ভাইয়ের জীবনের কষ্টের গল্প শুনলে আপনার চোখ দিয়ে এমনিতেই পানি এসে পড়বে। চলুন এবার প্রবাসী ভাইয়ের কষ্টের গল্প টা সোনাই।

প্রবাসী ভাইয়ের নাম ছিল পান্নু মিয়া। সে পরিবারের সুখের জন্য লিবিয়া পাড়ি জমায়। লিবিয়া গিয়ে সে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। সে প্রায় 12 বছর সেখানে একটানা থাকে পরিবারের সুখের জন্য। লিবিয়া সে তার মায়ের নামে 12 বছরের 54 লক্ষ টাকা খাওয়া খরচ বাদে জমা করে। কিন্তু তার মা ও বোন চালাকি করে সে টাকা দিয়ে বোলতা জামাইকে বাজারে জায়গা কিনে দিয়ে সেখানে বিল্ডিং তুলে দেয়। কেমন স্বার্থপর মা। নিজের স্বার্থে সে তার ছেলের বউকে কষ্ট দেয়। কষ্টার্জিত সকল টাকা তার মা তার বোনকে দিয়ে দেয়।

সেই প্রবাসী ভাই যখন 12 বছর পর বাড়ি ফিরে আসে তখন সে তার মায়ের কাছে টাকা চাইলে কিছুই দিতে পারে না। তখন তার মা কোন কথা না বলে তার বোনের বাসায় চলে যায়। সেই প্রবাসী ভাই তখন মায়ের খাতিরে মাকে কিছুই বলতে পারেনা। নিরবে সকল কষ্ট সহ্য করে যায়। এরপর প্রায় দুই বছর তাকে খুবই কষ্টের সাথে জীবন পরিচালনা করতে হয়। কেননা তাঁর হাতে কোনো টাকা ছিল না। সে মাত্র 70 হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে আসে। কিছুদিন পর তা শেষ হয়ে যায়।

এরপর সে মাটি কেটে জীবন পরিচালনা করতে থাকে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। তার বোন তার মাকে তার বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন তার ডাইনি মা আর কোনও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে তার ছেলের বাড়িতে ফিরে আসে। তবুও সেই প্রবাসী ভাই তার মাকে সাদরে গ্রহণ করে কোন প্রকার অভিযোগ ছাড়া। তখন তার মা তার ভুল বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তবে তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে কোন লাভ হয়নি। কেননা তার বোন তার সমস্ত টাকা মেরে খেয়েছে।

বলাবাহুল্য বোনের জামাই প্রথমে ভ্যান চালিয়ে খাইতো। আজকে শে প্রবাসী ভাইয়ের টাকায় বড়লোক হয়ে গেছে। সে এখন বাজারে জমি কিনে বিল্ডিং করে বসবাস করে সেই সাথে ব্যবসা করে।

তাই প্রবাসী ভাইয়েরা অনুগ্রহ করে আপনাদের কষ্টার্জিত টাকা কখনো অন্যের নামে দিবেন না। নিজের নামে অ্যাকাউন্ট করে সেখানে টাকা রাখবেন। ভুলবশত কখনো নিজের বউয়ের নামে টাকা রাখবেন না। এতে করে আপনি প্রতারিত হতে পারেন। উপরের বাস্তব গল্প থেকে আপনি হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন। একটু ভেবে দেখবেন উপরের ভাইয়ের মতো আপনার অবস্থা হলে কেমন হবে। সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *