পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্বীপ রাষ্ট্র হল জাপান। জাপানি ভাষার যে উৎস থেকে জাপান এসেছে তার অর্থ হল সূর্য উৎস। এর মূল কারণ জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়। আর যেহেতু প্রথম সূর্য উদিত হয় জাপানে তাই তার কাঞ্জি নাম অনুসারে এর নাম জাপান রাখা হয়েছে। জাপানকে আরেকটি নামে ডাকা হয় সেটি হল যৌগিক আগ্নেয়গিরি দ্বীপমালা। এর মূল কারণ এখানে প্রায় প্রতিদিন ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
পৃথিবীর যে সকল দেশগুলো খুব দ্রুত উন্নত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল জাপান ও সিঙ্গাপুর। তবে জাপানের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। অতি দ্রুত দেশটি তাদের ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের রয়েছে একটি দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন জনগোষ্ঠী। জাপানের প্রতিটি মানুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে এবং প্রতিটি মানুষ নিজের কাছ নিজে করতে পছন্দ করে।
প্রতিবছর জাপান সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। আবার কেউবা উন্নত পড়াশুনা করার জন্য জাপান গিয়ে থাকে। এজন্য তাদের প্রয়োজন ভিসা। আজকের এই পোস্টে আমি জাপান যেতে কত টাকা খরচ হয় এবং জাপান কাজের ভিসা প্রসেসিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আপনারা যারা জাপান যেতে ইচ্ছুক তারা নিচের অংশ ভালো করে দেখুন।
জাপান কাজের ভিসা
জাপান বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে যেমন স্টুডেন্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা ও কাজের ভিসা। আমাদের আজকের পোষ্টের বিষয় জাপান কাজের ভিসা। অনেকেই কাজের উদ্দেশ্যে জাপান যেতে চায়। তবে মনে রাখবেন জাপান যেতে হলে আপনাকে একজন দক্ষ কর্মী হতে হবে। যদি আপনি দক্ষ না হয়ে থাকেন তাহলে তারা কখনোই আপনাকে কাজের জন্য নিবে না।
জাপানে যে সকল কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো কৃষিকাজ, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও নির্মাণ কাজ। এই কয়েকটি কাজে জাপান শ্রমিক নিয়োগ দেয়। তবে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুত ভিসা পাওয়া যায়। আপনি যদি কাজের ভিসা আবেদন করেন তাহলে ৬০ দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আপনার ভিসা বের হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার সকল কাগজপত্র সঠিক হতে হবে।
জাপানে কাজের ভিসা পেতে আপনার যে সকল জিনিস লাগবে তা হলঃ
১। অন্তত এক বছর মেয়াদ সম্পন্ন একটি বৈধ পাসপোর্ট।
২। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড এর 4 কপি পাসপোর্ট সাইজ এর ছবি।
৩। ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
৪। আপনার পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
৫। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
৬। করোনার টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট।
৭। আপনি যে কাজে যাবেন সেই কাজ করার দক্ষতা সার্টিফিকেট।
৮। যে কোম্পানি আপনাকে কাজের জন্য নেবে তার অফার লেটার।
উপরের দেয়া তথ্যগুলো যদি আপনার সঠিকভাবে থাকে তাহলে আপনার ভিসা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে প্রসেসিং হয়ে যাবে। এরপর আপনি অল্প দিনের মধ্যে জাপান যেতে পারবেন। তবে যদি আপনার কাগজপত্র ঠিক না থাকে তাহলে আপনি জাপানের ভিসা কখনোই পাবেন না।
জাপান কাজের ভিসা খরচ
জাপান কাজের ভিসা বের করতে খরচ হয় জনপ্রতি ৩৫০০ ইয়েন জাপানি টাকায়। তবে যখন আপনি জাপান যাবেন তখন সব মিলিয়ে আপনার খরচ হবে অনেক। বর্তমানে জাপান যেতে সব মিলিয়ে খরচ বাংলাদেশি টাকায় ১১ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে। আমি এখানে যে হিসাব তুলে ধরেছি তা দালালের মাধ্যমে গেলে হবে। কেননা বাংলাদেশের সকল কাজ দালালের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
তবে সবচেয়ে ভালো যদি আপনার পরিচিত কেউ জাপান থেকে থাকে তার মাধ্যমে ভিসা নেয়া। সে যদি জাপান সরকারের কাছ থেকে অথবা কোন কোম্পানির কাছ থেকে ভিসা বের করে সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কম পড়বে। তখন আপনাকে যে এক্সট্রা টাকা দালালকে দিতে হয় তা আপনার কম খরচ হবে। এক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ্য থেকে ৬ লক্ষ টাকা।
জাপান কাজের ভিসা বেতন
জাপানে সর্বনিম্ন কাজের ভিসা বেতন আমেরিকান ডলারে ৫০০০ ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বেতনের পরিমাণ তারা অনেক বেশি দিয়ে থাকে। এটা তো শুধু আমি সর্বনিম্ন বেতনের কথা বললাম। জাপান সর্বোচ্চ বেতন দিয়ে থাকে ৯০ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় ৯০ লক্ষ টাকার সমান।
জাপান কৃষি কাজের বেতন দিয়ে থাকে সর্বনিম্ন ৫০০০ ডলার। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনি যে পরিমাণ টাকা খরচ করে যাবেন তা আপনার পকেটে নিতে খুব একটা সময় লাগবে না। তাই যারা যোগ্যতা সম্পন্ন এবং জাপান যেতে ইচ্ছুক তারা অতি দ্রুত জাপান কাজের ভিসাতে আবেদন করে নিন।
জাপান ভিসা আবেদনের নিয়ম
জাপান ভিসা আবেদনের জন্য আপনি দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। একটি হল আপনি অনলাইন থেকে ভিসা আবেদন করতে পারেন। অন্যটি হলো জাপান দূতাবাসে গিয়ে ভিসা আবেদন করতে পারেন। তবে অনলাইনে থেকে জাপান দূতাবাসে গিয়ে ভিসা আবেদন করলে ভালো হবে। আর দূতাবাসে গিয়ে ভিসা আবেদন অত্যন্ত সহজ।
আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিয়ে জাপান দূতাবাসে গিয়ে জমা দিবেন। তখন তারা আপনাকে একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে বলবে। আপনি নিজে অথবা কারো মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে দিলেই হবে। এরপর তারা ভিসা কনফার্ম হলে আপনাকে কল করে জানিয়ে দিবে অথবা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিবে।
Read More