উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের পাশে জাপান অবস্থিত। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় দেশ হল জাপান। এছাড়াও পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশও জাপান। জাপানের মানুষ অত্যন্ত সুশৃংখল ও ভদ্র হয়ে থাকে। জাপানের মানুষ সর্বদাই পরিষ্কার পরিছন্নতা পছন্দ করে এবং কাজকে তারা ভালোবাসে। কাজের প্রতি কখনো তারা অলসতা দেখায় না। তারা অত্যন্ত কর্মঠ। তারা সর্বদাই সময়ের কাজ সময়ে করে থাকে। এজন্য পৃথিবীব্যাপী তাদের সুনাম রয়েছে। আজকে আমরা এই জাপান যেতে কত টাকা খরচ হয়, জাপানে কাজের বেতন কত ও ভিসা খরচ নিয়ে আলোচনা করব।
জাপানে মানুষ তিনটি ভিসা নিয়ে যায়। স্টুডেন্ট ভিসা, ভ্রমণ ভিসা ও কাজের ভিসা। জাপানে কাজের ভিসা পাওয়ার সবচেয়ে কঠিন। তবে যদি আপনি একবার জাপানে কাজের ভিসা পেয়ে যান তাহলে তার সোনার হরিণ এর মত হবে। কেননা জাপানে কাজের বেতন অনেক বেশি অন্যান্য দেশের তুলনায়। আপনি যদি জাপানে কাজের বেতন শোনেন আপনার মাথা ঘুরে যাবে। তাছাড়া অনেকে আবার পড়াশোনার উদ্দেশ্যেও জাপান গিয়ে থাকে। আবার জাপান যাওয়ার খরচ অনেক বেশি হয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশী খরচ হয়ে থাকে।
জাপান যেতে কত টাকা লাগে
জাপান যেতে খরচের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার ভিসার উপর। আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় যান সে ক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে একরকম আর যদি আপনি কাজের ভিসায় যান আপনার খরচ হবে অন্যরকম। তবে এখানে আমি স্টুডেন্ট ভিসা, ভ্রমণ ভিসা, কাজের ভিসা এর খরচ বিস্তারিত তুলে ধরবো। তিন প্রকারের ভিসার ক্ষেত্রে তিন প্রকারের খরচ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কাজের ভিসায়। আপনি যদি জাপান যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনার খরচ পড়বে ১৮ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা।
তবে জাপানে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে জাপানি ভাষা শিখে আপনার সেখানে যেতে হবে। জাপানি ভাষা শেখার পর তারা আপনাকে তিন মাসের একটি ট্রেনিং নিবে। আপনি যদি সেই ট্রেনিংএ পাস করেন তাহলে আপনি জাপান যেতে পারবেন। তবে জাপান যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরী সেটা হল ভাষা শেখা। অবশ্যই আপনাকে জাপানি ভাষা জানতে হবে। তাছাড়া যদি আপনার IELTS Score ভালো থাকে সেক্ষেত্রে আপনি যেতে পারবেন।
জাপান ভিসা খরচ
স্টুডেন্ট ভিসা খরচ – জাপানের স্টুডেন্ট ভিসা বের করতে মাত্র বাংলাদেশি টাকায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খরচ অনেক বেশি হয়ে যায়। এছাড়াও আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ভিসা খরচ কম বেশি হতে পারে। তবে যদি আপনি কী স্টুডেন্ট ভিসায় জাপান যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিবছর ১৭ থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। আর স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে আপনার খরচ পড়বে সব মিলিয়ে ১৯ লক্ষ টাকার মতো।
ভ্রমণ ভিসা খরচ – জাপান ভ্রমণ ভিসা আবেদনের জন্য আপনার খরচ পড়বে INR ১৫০০ একজনের জন্য। দুইজনের জন্য খরচ পড়বে INR ২০০০ । আর দুই এর অধিক গেলে খরচ পড়বে INR ২৫০০। আর আপনার সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৫ লক্ষ টাকার মতো।
কাজের ভিসা খরচ – আপনি যদি কাজের ভিসায় জাপান যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনার খরচ পড়বে ২০ লক্ষ থেকে ২২ লক্ষ টাকা। আপনার কোন আত্মীয় যদি জাপান থেকে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে ১৮ লক্ষ টাকার মতো। চেয়ে থাকলে সবচেয়ে ভালো কেননা সে আপনার ভিসা প্রসেসিং এর সমস্যা কাজ করে দিবে। আর সে কোম্পানির মাধ্যমে চুক্তি করে সেখান থেকে আপনার কাজের জোগাড় করে দেবে।
জাপানে বেতন কত
জাপানে আপনি কে কাজে যান না কেন আপনার বেতন পড়বে ১ লক্ষ টাকার উপরে। জাপানে যদি আপনি পার্ট টাইম জব করেন প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা করে সেক্ষেত্রে আপনি বেতন পাবেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার বাংলাদেশি টাকায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বেতনের পরিমাণ অনেক হয়ে থাকে।
জাপানে বেতন কেমন
আপনি যদি কৃষিকাজ, ক্লিনার, ফ্যাক্টরির কাজ অথবা ড্রাইভিং এই সকল কাজ করেন তাহলে আপনার বেতন পড়বে প্রতিমাসে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। আর যদি আপনি নরমালি পার্ট টাইম জব করেন সেক্ষেত্রে আপনার বেতন পড়বে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। একমাত্র জাপানে কাজের বেতন বেশি হয়ে থাকে অন্যান্য দেশের তুলনায়।
জাপানে কোন কাজের চাহিদা বেশি
বর্তমানে জাপানের ফ্যাক্টরি ও কৃষি কাজের চাহিদা বেশি। আপনি যদি কৃষি কাজে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অতি সহজে জাপান যেতে পারবেন। আর কৃষিকাজে জাপানের বেতনের পরিমাণ অনেক হয়ে থাকে। আপনি যদি কৃষিকাজে জাপান যেতে চান তাহলে আপনার প্রতি মাসে বেতন পরবে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। আর যদি আপনি ফ্যাক্টরি ভিসায় জাপান যেতে পারেন তাহলে আপনার প্রতি মাসে বেতন পরবে ৫ লক্ষ টাকা।
জাপানের ভিসা কিভাবে পাওয়া যাবে
জাপানের ভিসা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো যদি আপনার পরিচিত কেউ জাপানে থাকে। আপনার পরিচিত কেউ জাপানে থাকলে সে অতি সহজে আপনার জন্য জাপানের ভিসা যোগাড় করতে পারবে। এছাড়াও জাপানের ভিসা আরেক উপায় পেতে পারেন। যদি ভাল কোন দালালের সাথে আপনার যোগাযোগ থাকে সেক্ষেত্রে সে আপনাকে অতি সহজেই ভিসা নিয়ে দিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনার খরচের পরিমাণ একটু বেশি হবে।
জাপানের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়
জাপানি নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আপনাকে সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করতে হবে। এরপর আপনাকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে সেখানে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে জাপানে নাগরিকত্ব পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সেখানকার কোন একটি কোষাগারে ভালো কাজের দক্ষতা দেখানো। তারা কাজকে ভালোবাসি যদি আপনার কাজ ভাল হয় সে ক্ষেত্রে তার আপনাকে নাগরিকত্ব দিবেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার আরেকটি উপায় হলো সেখানকার কোন মেয়েকে বিয়ে করা। এক্ষেত্রে আপনি খুব সহজেই নাগরিকত্ব পারবেন।
জাপানে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
আপনি যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চান সেখান থেকে আপনি স্কলার্শিপ নিতে পারবেন। জাপানি প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর তারা আপনার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। আপনার তথ্য যাচাইয়ের পর যদি তারা দেখে যে আপনি কলারশিপ পাওয়ার যোগ্য তখন তার আপনাকে কলারশিপ দিবে।
জাপানে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি
আপনি যদি জাপানে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই জাপানি ভাষা শিখতে হবে। কেননা জাপানি ভাষা ব্যতীত আপনি সেখানে উচ্চশিক্ষা করতে পারবেন না। কারণ আপনি যদি ভাষা না বুঝেন সেক্ষেত্রে আপনার পক্ষে পড়াশোনা করা সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন জাপানের ভাষা শেখা। ভাষা শেখার পর আপনি জাপানে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন।
আপনি যদি জাপানের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ডিগ্রী নিয়ে বের হতে পারেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে জাপানে চাকরির সুযোগ। আপনার যদি ভালো ডিগ্রী থাকে তাহলে জাপানের যেকোনো কোম্পানি আপনাকে চাকরির জন্য অফার লেটার দিবে। যখন আপনি সেখানে চাকরি করতে পারবেন। এভাবে আপনি জাপানে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি করতে পারবেন।
জাপানে পড়াশোনা খরচ
জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গেলে আপনার প্রতিবছর খরচ হবে ১৭ লক্ষ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা। আর আমরা সকলেই জানি জাপান থেকে সবচেয়ে বড় বড় বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। তাদের মত এত দক্ষ বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খুব কম হয়ে থাকে। আর তারা প্রতিটা কাজের প্রতি এতটাই পারদর্শী যা বলার বাইরে। তাড়াতাড়ি ছাড়া কোন কিছু বোঝেনা। তাদের লক্ষ্য একটা কাজ করতে হবে ও শিখতে হবে।
Read More
পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে – পর্তুগাল ভিসা খরচ
স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকাম – ঘরে বসে লক্ষ টাকা আয় করুন